রাজনীতি

[রাজনীতি][twocolumns]

আন্তর্জাতিক

[আন্তর্জাতিক][bleft]

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

[বিজ্ঞান-প্রযুক্তি][bsummary]

রেকর্ড ভেঙে ৪২ কোটি টাকার বই বিক্রি

ঢাকা : শেষ হলো অমর একুশে গ্রন্থমেলার মাসব্যাপী আয়োজন। অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে এবার বইমেলায় সব স্টল মিলিয়ে প্রায় ৪২ কোটি টাকার বই বিক্রি হয়েছে। গতবছর এই বিক্রির পরিমাণ ছিল ২১ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। আর এর আগের বছর ২০১৪ সালে তা ছিল সাড়ে ১৬ কোটি টাকা। সোমবার (২৯ ফেব্রুয়ারি) মেলার সমাপনী অনুষ্ঠানে মেলা পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব ড. জালাল আহমেদ এবারের বইমেলার প্রতিবেদনে জানান, মেলায় ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাংলা একাডেমি বিক্রি করেছে ১ কোটি ৩৯ লাখ ৬৩ হাজার ৪৫৮ টাকার বই। একাডেমির কাছে দেয়া প্রকাশকদের হিসেব মতে, প্রকাশনা সংস্থা বিক্রি করেছে ৪০ কোটি ৫০ লাখ টাকার বই। সেই হিসেবে এবার সর্বমোট বইয়ের বিক্রি দাঁড়ায় প্রায় ৪২ কোটি টাকা। তবে প্রকাশকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নানা কারণে তারা একাডেমিকে সঠিক পরিসংখ্যান দেয়নি। তাদের হিসাব মতে, এবার বিক্রি ছাড়িয়েছে ৫০ কোটি টাকা। গতবছর ছিল রাজনৈতিক অস্থিরতা। যে কারণে মেলায় বইয়ের বিক্রি ছিল কম। ঢাকার বাইরের পাঠক-ক্রেতাদের মেলা পেয়েছিল কম। তবে এবারের চিত্র একবারেই ভিন্ন। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা থাকায় মেলার প্রথম দিন থেকেই ছিল উপচেপড়া ভিড়। গতবার যারা বইমেলায় আসতে পারেননি, তারও এবার এসেছেন, কিনেছেন বই। এবারের বইমেলা শুরুর আগেই জনমনে আশঙ্কা ছিল নিরাপত্তা নিয়ে। গতবছর বইমেলা থেকে ফেরার পথে উগ্রবাদীদের হাতে নির্মমভাবে খুন হন বিজ্ঞানলেখক অভিজিৎ রায়। গুরুতর আহত হন তার স্ত্রী রাফিদা আহমেদ বন্যা। এরপর বছরজুড়েই ছিল উগ্রবাদীদের হুঙ্কার, খুন হন বেশ কয়েকজন লেখক। এবার তাই কঠোর নিরাপত্তাব্যবস্থা ছিল বইমেলায়। বসানো হয় প্রচুর সিসিটিভি ক্যামেরা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতিও ছিল চোখে পড়ার মতো। দু’একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া মেলা শান্তিপূর্ণভাবেই সম্পন্ন হয়েছে। এবার মেলার ১৫তম দিনে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের দায়ে ব-দ্বীপ প্রকাশনীর স্টল বন্ধ করে দেয়া হয়। অভিযোগ করা হয়, তাদের প্রকাশিত ‘ইসলাম বিতর্ক’ বইটিতে মহানবিকে ‘অশ্লীলভাবে’ কটাক্ষ করা হয়েছিল। এক সপ্তাহ পরই ২২ ফেব্রুয়ারি প্ল্যাটফর্ম নামে একটি স্টলে দাহ্য পদার্থ দিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করে দুর্বৃত্তরা। তবে আংশিক ক্ষয়ক্ষতি হলেও সেই চেষ্টা সফল হয়নি। মেলার ২৪তম দিনে সকালে বৈরি হয়ে ওঠে প্রকৃতি। হঠাৎ শিলাঝড়ে লণ্ডভণ্ড হয়ে যায় প্রাণের বইমেলা। এতে অনেক প্রতিষ্ঠানের বই ভিজে যায়। বিশেষ করে ছোট প্রতিষ্ঠানগুলো আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ে। পরে সংবাদ সম্মেলন করে মেলার সময় বাড়ানো ও ক্ষতিপূরণের দাবি জানায় বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতি। তবে সব মিলিয়ে এবারের বইমেলা নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন প্রকাশকরা। তাম্রলিপি প্রকাশনীর সত্ত্বাধিকারী এ কে এম তরিকুল ইসলাম রনি বলেন, ‘খুবই ভালো মেলা হয়েছে এবার। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার কারণে মেলার প্রথম দিন থেকেই পাঠক-ক্রেতাদের উপস্থিতি ছিল এবং সেটা শেষদিন পর্যন্ত অব্যাহত থেকেছে।’ ‘তবে আগামী বছর কিছু বিষয়ে সুদৃষ্টি দেয়া প্রয়োজন। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে খাবার ও পানীয়ের ব্যবস্থা অবশ্যই রাখতে হবে। অনেক জায়গায় এবার আলোকস্বল্পতা ছিল, এদিকে নজর দেয়া প্রয়োজন। মেলা সমতল করা প্রয়োজন, যাতে বৃষ্টির পানি না জমতে পারে এবং ড্রেনেজ ব্যবস্থা রাখাও জরুরি। স্টলের বিন্যাসের ক্ষেত্রেও আরেকটু নজর দেয়ার দরকার রয়েছে’, বলেন রনি। নতুন প্রকাশিত মোট বইগতবছরের তুলনায় এবার অমর একুশে গ্রন্থমেলায় নতুন বই প্রকাশের সংখ্যা কম। বাংলা একাডেমির তথ্য অনুযায়ী, গতবারের বইমেলায় যেখানে ৩ হাজার ৭০০টি নতুন বই এসেছিল, সেখানে এবার প্রকাশিত নতুন বইয়ের সংখ্যা ৩ হাজার ৪৪৪। অর্থাৎ গতবারের তুলনায় এবার ২৫৬টি বই কম এসেছে। একনজরে এবারের মেলা  এবারের গ্রন্থমেলায় ৬৫১টি ইউনিটে ৪০১টি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান ও সংগঠন অংশ নেয়। এর মধ্যে প্যাভিলিয়ন ছিল বাংলা একাডেমিসহ ১৫টি। চার ইউনিটের স্টল ১৯টি, তিন ইউনিটের ৩৭টি, দুই ইউনিটের স্টল ১৩৪টি ও এক ইউনিটের স্টল ১৯৬টি। লিটল ম্যাগ চত্বরে ৯৭টি প্রতিষ্ঠানকে তাদের প্রকাশনা প্রদর্শন ও বিক্রির ব্যবস্থা করে দেয়া হয়। ছোট ছোট প্রকাশনা সংস্থা এবং ব্যক্তি উদ্যোগে যেসব লেখক বই প্রকাশ করেছেন তাদের বই বিক্রির সুযোগ করে দেয়া হয় জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের স্টলে। লেখকদের জন্য ছিল মনোরম সাজে লেখক আড্ডা শিরোনামে ‘লেখককুঞ্জ’। আইএফআইসি ব্যাংকের আর্থিক সহায়তায় মেলার অবকাঠামো নির্মাণ ও সাজসজ্জার সব কাজ ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি ‘ইভেন্ট টাচ’ সম্পন্ন করে। সমাপনী অনুষ্ঠান সন্ধ্যা ৬টায় গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০১৬-এর সমাপনী অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান। গ্রন্থমেলা ২০১৬-এর প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন মেলা পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব ড. জালাল আহমেদ। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। সভাপতিত্ব করেন এমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। অনুষ্ঠানে প্রবাসে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের চর্চায় অবদানের জন্য ফরাসি গবেষক ও অনুবাদক ফ্রাঁস ভট্টাচার্য ও প্রবাসী বাঙালি কথাশিল্পী মন্জু ইসলামকে সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্ পুরস্কার-২০১৫ আনুষ্ঠানিকভাবে দেয়া হয়। এছাড়া পূর্ব ঘোষিত বিভিন্ন প্রকাশনী সংস্থাকে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে পুরস্কার তুলে দেয়া হয়।

No comments: