প্রশাসনের নির্লিপ্ততা ও প্রভাবশালী মালিকদের দাপটে রাজধানীর সায়েদাবাদের প্রধান সড়কের পুরোটাই পরিণত হয়েছে বাস টার্মিনালে। মূল টার্মিনালের ভেতরে জায়গা সংকটের কারণ দেখিয়ে শত-শত বাস দিনরাত সড়কের ওপর থামিয়ে যাত্রী ওঠানামা করা হয়। টার্মিনালের ভেতর থেকে মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভারে ওঠানামার পথ থাকলেও অধিকাংশ বাস তা ব্যবহার করছে না। বাসের পাশাপাশি হকাররাও সড়ক দখলে নিয়েছে। ফলে সড়ক দিয়ে চলাচলকারী অন্য যানবাহনগুলোকেও অসুবিধায় পড়তে হচ্ছে। এর ফলে যানজট স্থায়ী রূপ নিয়েছে টার্মিনাল সংশ্লিষ্ট এলাকায়। সরেজমিনে দেখা গেছে, মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভারের নিচে ২৫/১/বি উত্তর সায়েদাবাদের এমআর প্লাজা থেকে পশ্চিম দিকে সাঈদাবাদী পীরের বাড়ি পর্যন্ত বিভিন্ন পরিবহন কোম্পানির অসংখ্য বাস কাউন্টার গড়ে উঠেছে। এসব কোম্পানির মধ্যে রয়েছে ঈগল পরিবহন, আল-মোবারকা পরিবহন, শ্যামলী পরিবহন, সৌদিয়া পরিবহন, হানিফ এন্টারপ্রাইজ, হামীম পরিবহন, মৌসুমী আল সৈয়দ পরিবহন, মুন লাইন পরিবহন, দোলা পরিবহন, রাফিন শাফিন পরিবহন, আল-বারাকা পরিবহন, মধুমতি পরিবহন, টুঙ্গীপাড়া এক্সপ্রেস, বলেশ্বর পরিবহন, ফাল্গুনী পরিবহন, ইউনিক পরিবহন, ইকোনো সার্ভিস, একুশে পরিবহন, আল-আরজু পরিবহন, মামুন এন্টারপ্রাইজ, হিমাচল এক্সপ্রেস, ঢাকা এক্সপ্রেস ইত্যাদি। এ ছাড়া, টার্মিনালের দক্ষিণ দিকের সড়কের অবস্থাও একই। এখানে একদিকে যেমন দীর্ঘক্ষণ বাস দাঁড়িয়ে থাকে, অন্যদিকে ফুটপাত ও মূল সড়কে রয়েছে হকারদের উৎপাত। একই কোম্পানির চার-পাচটি কাউন্টারও রয়েছে সড়কের পাশে। বিভিন্ন সাইজের কক্ষ ভাড়া নিয়ে কাউন্টার বানানো হয়েছে। কাউন্টারগুলোকে কেন্দ্র করে সারাক্ষণ অসংখ্য বাস প্রধান সড়কে দাঁড়িয়ে থাকে। যাত্রী ওঠানামা চলছে নির্বিঘ্নে। এর ফলে সাধারণ কোনও গাড়ি এগোতে পারে না। এর ফলে সারাক্ষণ যানজট লেগে থাকছে প্রধান সড়কে। টার্মিনাল ছেড়ে বাস কেন রাস্তায়—জানতে চাইলে এমআর প্লাজায় শ্যামলী কাউন্টারের সুপারভাইজার বলেন, আমাদের বাস এখানে আসে যাত্রী তুলতে। এ বাসগুলো অল্প সময় দাঁড়ায়। একই প্রশ্নের জবাবে এমআর প্লাজা সংলগ্ন আল-মোবারকা পরিবহনের কাউন্টার ম্যানেজার জালাল বলেন, টার্মিনালের ভেতর জায়গা নেই। তাই আমাদের কিছু বাস এখানে রাখা হয়। এ জন্য কাউন্টারের পাশে জমি ভাড়া নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, রাস্তায় থামালেও তা সামান্য সময়ের জন্য। আল-মোবারকা পরিবহনের অনেক বাস রয়েছে। এগুলো বিভিন্ন মালিকের। আমাদের মালিকের বাস রয়েছে নয়টি। এই বাসগুলোই সায়েদাবাদের রাস্তা ব্যবহার করে থাকে। এতে কারও অসুবিধা হয় না বলেও তিনি দাবি করেন। জনপথ মোড়ে ও ফ্লাইওভারের নিচে সড়ক ডিভাইডারের স্থানেও বাস টার্মিনাল তৈরি করেছেন প্রভাবশালী মালিকরা। অর্ধশতাধিক বাস সারাক্ষণ এখানে থামিয়ে রাখা হয়। গন্তব্যের উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়ার আধাঘণ্টা আগে এগুলো নিজ নিজ কাউন্টারের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। সড়কের ওপর বাস গিজগিজ করলেও মূল টার্মিনালের ভেতর তেমন ব্যস্ততা নেই। টার্মিনালকে অনেক বাস মালিক গ্যারেজে পরিণত করেছেন। যাত্রীবাহী বাসের জন্য যেসব প্লাটফর্ম রয়েছে, সেগুলোর বেশির ভাগ বেদখল হয়ে গেছে। প্লাটফর্মে বিভিন্ন কোম্পানির টিকিট কাউন্টার থাকলেও সেগুলোয় টিকিট বিক্রি হয় না।
সায়েদাবাদ টার্মিনাল থেকে দূরপাল্লার বাসগুলো যেন দ্রুত আসা-যাওয়া করতে পারে, সে জন্য মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভারের তিনটি র্যা ম্প (ওঠা-নামার পথ) রয়েছে। এসব র্যা ম্প ব্যবহার করলে বাসগুলো টার্মিনালের ভেতর থেকে ফ্লাইওভারে উঠে যাত্রাবাড়ী ও শনির আখড়া হয়ে খুব সহজেই ঢাকার বাইরে চলে যেতে পারে। আবার ঢাকার বাইরে থেকে আসা বাসগুলো ফ্লাইওভার হয়ে নিরবচ্ছিন্নভাবে টার্মিনালে ঢুকতে পারে। এতে মূল সড়ক যানজট হওয়ার কথা নয়। কিন্তু কোনও চালক এই নিয়ম মানতে চান না। বেশি লাভের আশায় নিজেদের বাসগুলোকে তারা ফ্লাইওভারের নিচ দিয়ে চলাচল করাচ্ছেন। টার্মিনালের আশপাশের এই অরাজকতা ঘটছে খোদ ট্রাফিক পুলিশের সামনে। সড়কে ট্রাফিক পুলিশ দায়িত্ব পালন করলেও অরাজকতা রোধে কোনও উদ্যোগ নিতে দেখা যায়নি। শনিবার সকাল থেকে সায়েদাবাদ টার্মিনালের সামনের সড়কগুলোয় প্রচণ্ড যানজট দেখা যায়। এ যানজটে দাঁড়িয়েই বাসগুলো যাত্রী ওঠানামা করে। সামনে ট্রাফিক পুলিশ থাকলেও তারা কিছুই বলছেন না। দুপুর সোয়া ১২টায় সায়েদাবাদ ব্রিজের সামনে দায়িত্ব পালনরত ট্রাফিক সার্জেন্ট মিজানুর রহমান বলেন, অনেক পরিবহন কোম্পানি তাদের যাত্রীদের সুবিধার্থে টার্মিনালের বাইরে কাউন্টার করেছেন। এ জন্য আমরা কিছু বলি না। কিন্তু ‘টার্মিনালের বাইরে কোনও বাস দাঁড়াতে পারবে না এবং দাঁড়ালে ট্রাফিক পুলিশ ব্যবস্থা নেবে’—এ নিয়মের কথা স্মরণ করিয়ে দেওয়ায় মিজানুর রহমান বলেন, কথাটি ঠিকই। এরপরই তিনি যানজট ছাড়ানোর জন্য অন্যদিকে চলে যান। সাধারণ বাস মালিকরা বলেছেন, মূলত প্রভাবশালী মালিকদের কারণেই মূল টার্মিনালের ভেতর থেকে বাস চলাচল নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। প্রভাবশালী মালিকরা পুলিশকে ম্যানেজ করে নিজেদের ইচ্ছামতো কাউন্টার বসিয়ে রমরমা ব্যবসা করছেন। যানজটে পড়ে সাধারণ মানুষ ভোগান্তির শিকার হলেও প্রভাবশালীদের কিছু যায় আসে না। সায়েদাবাদের সড়কে যেন কোনও বাস না দাঁড়ায়, সে জন্য কঠোর নির্দেশনা জারি করেছিলেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন। গত ১৩ জানুয়ারি নগরভবনে পরিবহন মালিক ও পুলিশ কর্মকর্তাদের নিয়ে আয়োজিত এক যৌথসভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল যে, টার্মিনালের বাইরে কোনও বাস দাঁড়াবে না। শুধু টার্মিনালের ভেতর থেকে বাস ছেড়ে যাবে। টিকিট বিক্রি হবে টার্মিনালের ভেতর থেকে। কিন্তু এ সিদ্ধান্তের পর প্রায় দেড় মাস পেরিয়ে গেলেও তা কার্যকর করা হয়নি। মেয়রের নির্দেশনা ও যৌথ সভার সিদ্ধান্ত কেনও বাস্তবায়ন হচ্ছে না, জানতে চাইলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের টার্মিনাল ব্যবস্থাপক মো. মারুফ হাসান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আমরা তো টার্মিনাল দেখাশোনা করি। রাস্তায় কোনও বাস দাঁড়ালো কি না, সেটা দেখার দায়িত্ব পুলিশের। তিনি বলেন, টার্মিনালে কোনও বাস রাখার বিধান নেই। মালিকরা তাদের বাসগুলো রাখবেন নিজস্ব ডিপোতে। ওই ডিপো থেকে টার্মিনালে এসে যাত্রী নিয়ে বাস গন্তব্যে চলে যাবে। কিন্তু কেউ মানছেন না। সবাই তাদের বাসগুলো টার্মিনালের ভেতরই রাখছেন। প্রসঙ্গত, এক সময় রাজধানীর একমাত্র বাস টার্মিনাল ছিল ফুলবাড়িয়ায়। এরশাদ আমলে ১৯৮৪ সালের ডিসেম্বরে ফুলবাড়িয়াকে তিন ভাগ করে সায়েদাবাদ, গাবতলী ও মহাখালীতে বাস টার্মিনাল বিকেন্দ্রীকরণ করা হয়। এরপর থেকে বাসগুলো টার্মিনাল ব্যবহার করলেও প্রধান সড়কে দাঁড়িয়ে যাত্রী ওঠানামা করেই চলেছে। বর্তমানে সায়েদাবাদ টার্মিনাল কেন্দ্রিক প্রায় আড়াই হাজার বাস দেশের দেড়শ’ রুটে চলাচল করছে।
রাজনীতি
[রাজনীতি][twocolumns]
আন্তর্জাতিক
[আন্তর্জাতিক][bleft]
বিজ্ঞান-প্রযুক্তি
[বিজ্ঞান-প্রযুক্তি][bsummary]
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
social counter
[socialcounter]
[facebook][#][215K]
[twitter][#][115K]
[google-plus][#][200K]
[instagram][#][152,500]
Popular Posts
recent posts
recentposts
popular
-
অনলাইন ডেস্ক: ডিম হচ্ছে এমন একটি খাবার যা ভীষণ সহজে রান্না করা যায়, অনেক রকম রেসিপিতে রান্না করা যায়, আবার ছোট-বড় সকলেই খেতে ভালোবাসেন। ...
-
রসমালাই খাবারটির নাম শুনলেই জিভে পানি চলে আসে। যারা মিষ্টি খেতে পছন্দ করেন না তারাও রসমালাই খেতে পছন্দ করেন। মজাদার এই মিষ্টিটি সাধারণত ছ...
-
শীতের অন্যতম একটি সবজি হল বাঁধাকপি। শীতকালে প্রায় সব বাসায় বাঁধাকপি ভাজি করা হয়। এমনকি বাঁধাকপি দিয়ে তরকারিও রান্না করা হয়ে থাকে! বাঁধাকপ...
-
রেস্তরাঁ স্টাইলে রান্না করা শীতের সবজি সবজি যারা খেতে পছন্দ করেন, তাদের জন্য শীতকাল খুব প্রিয় একটি ঋতু। বাজারে গেলে পাওয়া যায় নানা রকম ...
-
যা লাগবে মুরগি স্কিনসহ আস্ত (১ কেজি পরিমাণ ) ১ টি গোলমরিচ ফাঁকি ১ টেবল চামচ লবণ ২ চা চামচ পাপরিকা পাউডার ২ চা চামচ ( পাপরিকা না পেলে কাশ...
-
আপনার নিজের হাতে রান্না করা খাবারের খুব সুন্দর একটি ছবিসহ রেসিপিটি বাংলায় লিখে পাঠিয়ে দিন আমাদের ফেসবুক পেজের ইনবক্সে। আপনার রেসিপিটি য...
-
অনলাইন ডেস্ক: আমরা প্রতিনিয়ত যেসকল খাবার খাচ্ছি তা সরাসরি আমাদের শরীরে প্রভাব ফেলছে। শুধু শরীর নয় এটি আমাদের ত্বকেও প্রত্যক্ষভাবে প্রভাব ...
-
রাজীবপুর (কুড়িগ্রাম) : এই বিশ্ব সংসারে অনেক ঘটনা ঘটে যার কোনো ব্যাখ্যা নেই। তেমনি একটি ঘটনা ঘটেছে ব্রহ্মপুত্র নদ বিচ্ছিন্ন দুর্গম দইখাওয়া...
-
শীতের এই মৌসুমে গরম গরম কাবাব আর নানা কিন্তু সন্ধ্যে হলেই বেশ জমে। কাবাব খেতে বাইরে যাওয়া কেন, ঘরেই তৈরি করে নিন না মজাদার রেশমি কাবাব। চ...
No comments: