ভোট ছাড়াই আওয়ামী লীগের ৬২ চেয়ারম্যান

প্রথম ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলের ৬২ চেয়ারম্যান প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন। এসব পদে কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় একক প্রার্থী হিসেবে তাদের বিজয়ী ঘোষণা করবে নির্বাচন কমিশন। ফলে প্রথম ধাপে ৬৭০ ইউপিতে ২২ মার্চ ভোট হবে। এ পর্যায়ে ৭৩২টিতে ভোট হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ৬২ চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পথে এগিয়ে যাওয়ায় এসব ইউপিতে ভোট হবে না। একটি ছাড়া সবগুলোতে প্রার্থী আছে আওয়ামী লীগের। বিএনপির ১১৯টি ইউনিয়নে কোনো প্রার্থী নেই। মনোনয়ন দাখিল করতে না পারা, যাচাই-বাছাইয়ে প্রার্থিতা বাতিল এবং প্রত্যাহার করে নেয়ায় এসব ইউনিয়নে মাঠের বিরোধী দল বিএনপি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারছে না। চূড়ান্ত হিসাবে এ নির্বাচনে মোট প্রার্থীর সংখ্যা ৩ হাজার ৩৪ জন। ২ মার্চ প্রথম ধাপের প্রার্থিতা প্রত্যাহার হলেও রোববার চূড়ান্ত হিসাব প্রকাশ করেছে ইসি। এতে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। ইসির কর্মকর্তারা জানান, প্রথম ধাপে ৭৫২টি ইউপির তফসিল ঘোষণা করা হয়। প্রথমদিকে নানা কারণে ১৩টি স্থগিত করা হয়। ফলে ৭৩৯ ইউপিতে মনোনয়নপত্র দাখিল করেন ৩ হাজার ৫৬৮ জন। এরপর আরও ৭টি ইউনিয়নে নির্বাচন স্থগিত হয়ে যায়। ফলে প্রথম ধাপে ইউনিয়নের সংখ্যা দাঁড়ায় ৭৩২। ২ মার্চ মনোনয়ন প্রত্যাহারের সময় শেষ হওয়ার পর দেখা গেছে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৩৪ জন।   প্রথম ধাপে ইউপি নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার ক্ষেত্রে বিভিন্ন স্থানে বাধা, হামলা, মারধর ও মনোনয়নপত্র ছিনিয়ে নেয়ার অভিযোগ রয়েছে বিএনপিসহ বিরোধী মতের অনেক প্রার্থীদের। এছাড়া ঠুনকো অজুহাতে বিএনপির প্রার্থী বাদ দেয়া এবং ভয়-ভীতি ও জোর করে প্রার্থিতা প্রত্যাহারে বাধ্য করার অভিযোগ রয়েছে বিস্তর। যদিও কমিশন জানিয়েছে, সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়া তা আমলে নেয়া হবে না।   ইসির চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকায় দেখা গেছে, ৭৩২ ইউপিতে ১৩টি রাজনৈতিক দলের ১ হাজার ৭৮৮ জন প্রার্থী রয়েছেন। এছাড়া স্বতন্ত্রভাবে লড়ছেন ১ হাজার ২৪৬ জন। স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বড় অংশ আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বিদ্রোহী এবং জামায়াতে ইসলামীর। দলীয় প্রার্থীদের মধ্যে আওয়ামী লীগের ৭৩১, বিএনপির ৬১৩, জাতীয় পার্টির ১২৭, জাসদের ২৯, বিকল্পধারা বাংলাদেশের ৪, ওয়ার্কার্স পার্টির ২৩, জাতীয় পার্টি-জেপির ১৭, বিএনএফের ৭, কমিউনিস্ট পার্টির ৪, তরিকত ফেডারেশনের ১, জমিয়তে ইসলামীর ১, ইসলামী আন্দোলনের ২২৭ এবং ন্যাপের ৩ জন। সংশ্লিষ্টরা জানান, একমাত্র পিরোজপুরের কাউখালীতে আওয়ামী লীগের কোনো প্রার্থী নেই। বাকি সবগুলোতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী রয়েছে। অপরদিকে যে ৬২টি ইউপিতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আওয়ামী লীগ প্রার্থী জয়ী হয়েছেন, সেগুলো বাদে আরও ৫৭টিতে বিএনপির কোনো প্রার্থী নেই। এসব ইউপিতে আওয়ামী লীগের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন একই দলের বিদ্রোহীসহ অন্যরা। সংশ্লিষ্টরা জানান, বাগেরহাটের চিতলমারীর ৭টি এবং মোল্লাহাটের ৬টিতেই আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হওয়ায় এ দুই উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে ভোট গ্রহণ হবে না। তবে অন্যান্য পদে ভোট হবে। একইভাবে বাগেরহাট সদরের ১০টি ইউপির মধ্যে ৯টিতেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, এ ধাপে ৬৭টি ইউপিতে দু’জন, ১৫২টি ইউপিতে ৩ জন, ১৫৮টি ইউপিতে ৪ জন, ১৩২টি ইউপিতে ৫ জন, ৮৯টি ইউপিতে ৬ জন, ৪২টি ইউপিতে ৭ জন, ১৪টি ইউপিতে ৮ জন, ১১টি ইউপিতে ৯ জন, ৪টি ইউপিতে ১০ জন এবং একটি ইউপিতে ১১ জন করে প্রার্থী চেয়ারম্যান পদের বিপরীতে লড়ছেন। যে ৬২ ইউপিতে আ’লীগ প্রার্থী জয়ী : প্রথম ধাপে ৬২ ইউপিতে আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়েছেন। সেগুলো হচ্ছে- খুলনার তেরখাদা, গোপালগঞ্জের টুঙ্গীপাড়ার বর্নি, কশলী, পাটগাতী; ঝালকাঠির নলছিটির কুলকাঠি, মোল্লারহাট, নাচনমইন, সিন্ধকাঠি; বাগেরহাটের মোংলার সোনাইতলা, রামপালের মালিকেরবেড়, পেড়িখালী; চিতলমারীর চরবানিয়ারী, বড়বাড়িয়া, চিতলমারী, হিজলা, সন্তোষপুর, কলাতলা, শিবপুর; ফকিরহাট, মূলঘর; মোল্লাহাটের আটজুড়ি, চুনখোলা, গাওলা, কোদালিয়া, কুলিয়া, উদয়পুর, বাগেরহাট সদর, বাড়ইপাড়া, বেমরতা, বিঞ্চুপুর, ডেমা, গোটাপাড়া, যাত্রাপুর, কাড়াপাড়া, খানপুর, রাখাগাছি; কচুয়ার বাধাল, ধোপাখালী, গজালিয়া; কচুয়া; মোড়েলগঞ্জের চিংড়াখালী, পঞ্চকরণ, তেলিগাতি; ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুরের পাহাড়িয়াকান্দি, ছয়ফুল্লাকান্দি; বরগুনার বুড়িরচর; বরিশালের বানারীপাড়ার উদয়কাঠি; ভোলার দ. দিঘলদী, দৌলতখানের চলখলিফা; মাদারীপুরের শিবচরের বন্দরখোলা, বহেরাতোলা উত্তর, বহেরাতলা দক্ষিণ, ভাণ্ডারিকান্দি, দত্তপাড়া, কাদিরপুর, কাঠালবাড়ী, কুতুবপুর, মাদবরেরচর, নিলখী, পাঁচ্চর, শিরুয়াইল; মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখানের জৈনসার এবং সাতক্ষীরার কলোরোয়ার সোনাবাড়ীয়া। এছাড়া যেসব ইউপিতে বিএনপির প্রার্থী নেই : আওয়ামী লীগ প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী ৬২টি ইউপি ছাড়াও সেসব স্থানে বিএনপির প্রার্থী নেই সেগুলো হচ্ছে- কক্সবাজারের বড় মহেশখালী, কিশোরগঞ্জের লতিফাবাদ, কুমিল্লার দেবিদ্বারের বড়শালঘর, বরকামতা; খুলনার বাটিয়াঘাটার সুরখালী, পাইকগাছার গদাইপুর, লস্কর, দাকোপের লাউডোব, কৈলাশগঞ্জ, কামারখোলা, তিলডাঙ্গা, তেরখাদার সাচিয়াদাহ, ছাগলাদহ; গোপালগঞ্জের টুঙ্গীপাড়ার ডুমুরিয়া, গোপালপুর; ঝালকাঠির নলছিটির দপদপিয়া; ঢাকার দোহারের নয়াবাড়ী; দিনাজপুরের ঘোড়ারঘাটের পালশা; নেত্রকোনার খালিয়াজুরীর গাজীপুর; নোয়াখালীর হাতিয়ার চরঈশ্বর, চরকিং; পাবনার বেড়ার রুপপুর, কৈটোলা; পিরোজপুরের ভাণ্ডারিয়ার তেলিখালী; পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ার তিরনইহাট; বাগেরহাটের মোংলার চাঁদপাই, বুড়িরডাঙ্গা, রামপালের গৌরন্বা, রাজনগর, ফকিরহাটের নলধা-মৌভোগ, কচুয়ার মঘিয়া, রাড়ীপাড়া, বহরবুনিয়া, মোড়েলগঞ্জের দৈবজ্ঞহাট; বরগুনার বদরখালী, বরগুনা, ফুলঝুরি, কেউড়াবুনিয়া, আমতলির কুকুয়া; বরিশালের শায়েস্তাবাদ, বাবুগঞ্জের দেহেরগতি, বাকেরগঞ্জের পাদ্রিশিবপুর; মাদারীপুরের শিবচরের বাঁশকান্দি, লক্ষ্মীপুরের রামগতির চরপোড়াগাছা; সাতক্ষীরার দেবহাটার কুলিয়া, কালীগঞ্জের চাম্পাপুর, ধলবাড়ীয়া, সদরের বৈকারী, শ্যামনগরের আটুলিয়া, ভুরুলিয়া, বুড়ীগোয়ালীনি, কাশিমারী, কলারোয়ার কয়লা, দোয়াড়া, জুগীখালী, কেরালকাতা এবং সিলেটের টুকেরবাজার।